মোঃ নুর নবী জনিঃ-নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে যথাযোগ্য মর্যাদায় শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালিত হয়েছে। বুধবার সন্ধ্যায় সোনারগাঁ উপজেলা প্রশাসন ও সোনারগাঁ উপজেলা একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির উদ্যোগে পৌরসভার চিলারবাগ এলাকায় বিজয় স্তম্ভে প্রদীপ প্রজ্জ্বলন ও আলোচনা সভার মাধ্যমে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয় ।
সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রেজওয়ান উল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, নারায়ণগঞ্জ – ৩ আসনের সংসদ সদস্য জননেতা লিয়াকত হোসেন খোকা।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, সোনারগাঁ উপজেলা চেয়ারম্যান এডভোকেট শামসুল ইসলাম ভূঁইয়া, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোঃ ইব্রাহীম, সোনারগাঁ থানার অফিসার ইনচার্জ মাহবুবুর রহমান, উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মাহমুদা আক্তার ফেন্সি, সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও পিরোজপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মাসুদুর রহমান মাসুম, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের সাবেক কমান্ডার সোহেল রানা ও সাবেক ডেপুটি কমান্ডার ওসমান গনি,নাঃগঞ্জ জেলা পরিষদ সদস্য আবু নাঈম ইকবাল।
অনুষ্ঠানের শুরুতে শহীদ বুদ্ধিজীবী ও মহান মুক্তিযুদ্ধে নিহত সকল শহীদদের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনায় বিশেষ মোনাজাত করা হয়। পরে তাদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন শেষে মোমবাতি প্রজ্জ্বলন ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সোনারগাঁ উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা এন এম ইয়াছিনুল হাবিব তালুকদারের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত অনুষ্ঠানে এসময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, সোনারগাঁ থানার (ওসি তদন্ত) আহসান উল্লাহ, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম প্রধান, কেন্দ্রীয় যুব মহিলা লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নাসরিন সুলতানা ঝরা, উপজেলা একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শেখ এনামূল হক বিদ্যুৎ, সিনিয়র সহ-সভাপতি শফিকুল ইসলাম ইমাম, সাধারণ সম্পাদক গোলজার হোসেন ভূঁইয়া, সাংগঠনিক শওকত ওসমান সরকার রিপন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক এনায়েতুল ইসলাম শিপন, উপজেলা মৎস্যজীবী লীগের সভাপতি মোঃ কাইউম, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা জহিরুল ইসলাম খোকন, নির্মূল সাহা সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনের নেতাকর্মী ও বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ।
উল্লেখ্য পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের মাত্র দু’দিন আগে ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর রাতের অন্ধকারে কেবল ঢাকা শহরেই প্রায় দেড়শ বুদ্ধিজীবী ও বিভিন্ন পেশার কৃতী মানুষকে চোখ বেঁধে অপহরণ করে নিয়ে যায়।
পরদিন সকালে ঢাকার মিরপুরের ডোবা-নালা ও রায়েরবাজার ইটখোলায় বিক্ষিপ্তভাবে পড়ে থাকতে দেখা যায় বুদ্ধিজীবীদের নিথর দেহ। কারও শরীর বুলেটবিদ্ধ, কারও বা অমানুষিক নির্যাতনে ক্ষতবিক্ষত। হাত পেছনে বেঁধে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে নাড়িভুঁড়িও বের করে ফেলা হয়েছিল অনেকেরই। বাঙালি জাতির দীর্ঘ মুক্তিসংগ্রামে এসব বুদ্ধিজীবী নিজেদের মেধা, মনন ও লেখনীর মাধ্যমে স্বাধীনতার সংগঠকদের প্রেরণা জুগিয়েছেন। দেখিয়েছেন মুক্তির পথ। গোটা জাতিকেও উদ্দীপ্ত করেছেন অধিকার আদায়ের সংগ্রামে।
১৪ ডিসেম্বরকে বুদ্ধিজীবীদের নিধনযজ্ঞের শিকারের দিন হিসেবে স্মরণ করা হলেও মূলত ১০ ডিসেম্বর থেকেই ইতিহাসের এ ঘৃণ্যতম অপকর্মের সূচনা হয়। সপ্তাহজুড়ে এদের তালিকায় একে একে উঠে আসে অসংখ্য বুদ্ধিদীপ্ত সাহসী মানুষের নাম।
হিসেবে স্মরণ করা হলেও মূলত ১০ ডিসেম্বর থেকেই ইতিহাসের এ ঘৃণ্যতম অপকর্মের সূচনা হয়। সপ্তাহজুড়ে এদের তালিকায় একে একে উঠে আসে অসংখ্য বুদ্ধিদীপ্ত সাহসী মানুষের নাম।
পরে কৃতী এসব বুদ্ধিজীবীর তালিকাই তুলে দেওয়া হয়েছিল তৎকালীন জামায়াতে ইসলামীর সশস্ত্র ক্যাডার গ্রুপ কুখ্যাত আলবদর ও আলশামস বাহিনীর হাতে। নেপথ্যে ছিল পূর্ব পাকিস্তানের তৎকালীন গভর্নরের সামরিক উপদেষ্টা রাও ফরমান আলী। মূলত ১০ ডিসেম্বর থেকেই রাতের আঁধারে তালিকাভুক্ত বুদ্ধিজীবীদের বাসা থেকে চোখ বেঁধে রায়েরবাজার এবং মিরপুর বধ্যভূমিতে নিয়ে গুলি ও বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে নির্মমভাবে হত্যা শুরু হয়। আর এ অপকর্মের চূড়ান্ত নীলনকশারই বাস্তবায়ন ঘটে ১৪ ডিসেম্বর। তার পর থেকে ১৪ ডিসেম্বর দেশে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালন হয়ে আসছে।