মোঃ নুর নবী জনিঃ– নির্বাচনী সহিংসতায় নারায়ণগঞ্জ সোনারগাঁয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে হৃদয় ভূঁইয়া নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়। এসময় গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন আরেক যুবক।
এ ঘটনায় শনিবার রাতে নিহত হৃদয়ের বড় ভাই ইকবাল হোসেন ভূঁইয়া বাদী হয়ে ২১ জনের নাম উল্লেখসহ অনেককে অজ্ঞাতনামা আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় নির্বাচনে বিজয়ী প্রার্থী আজিজ সরকারকে প্রধান আসামি করা হয়েছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সোনারগাঁ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. মহসিন।
এঘটনায় এখন পর্যন্ত পুলিশ কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি । এর আগে গত শনিবার বিকেলে উপজেলার পিরোজপুর ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের উপনির্বাচনে দুধঘাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের বাইরে ফল ঘোষণা নিয়ে পুলিশ ও দুই প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে ত্রিমুখী সংঘর্ষ এবং ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় পুলিশ পরিদর্শকসহ ২০ জন আহত হয়।
নিহত হৃদয় ভূঁইয়া ইউপি সদস্য প্রার্থী কায়সার আহম্মেদ রাজুর সমর্থক ও দুধঘাটা গ্রামের আমির আলী ভূঁইয়ার ছেলে। গুলিবিদ্ধ আরেক যুবক কামাল ভূঁইয়ার ছেলে ওমর ফারুককে (২৭) আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
পুলিশ ও এলাকাবাসী জানায়, ৩ নম্বর ওয়ার্ডে উপনির্বাচনে শনিবার সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ইউপি সদস্য পদে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। ভোট গ্রহণ শেষে আজিজ সরকার মোরগ প্রতীকে ৯২৯ ভোট এবং তালা প্রতীকে কায়সার আহম্মেদ রাজু ৮১১ ভোট পান।
ফল জানার পর ওই কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা মিজানুর রহমানকে ফের ভোট গণনার অনুরোধ করেন রাজু। পরে ভোট গণনা করে রাজুর পক্ষে এক ভোট যুক্ত হয়। এ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে রাজু প্রিসাইডিং কর্মকর্তার কাছে তৃতীয় দফা ভোট গণনার দাবি জানান। এ নিয়ে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে পুলিশ ও দুই প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া এবং ইট-পাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশ ও আনসার সদস্যরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ফাঁকা গুলি, রাবার বুলেট ও টিয়ার শেল ছোড়েন।
এ সময় রাজুর সমর্থক হৃদয় ভূঁইয়া ও ওমর ফারুক গুলিবিদ্ধ হন। হাসপাতালে নেওয়ার পথে হৃদয় মারা যায় ও ১২ জন আহত হন।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গেলে সোনারগাঁ থানার পুলিশ পরিদর্শক (অপারেশন) সাইফুল ইসলাম, সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) খবিরউদ্দিন, কনস্টেবল মঞ্জু মিয়া, জুয়েল রানা, আবদুস সালাম, কবির হোসেন, নূর মোহাম্মদ ও আল আমিন আহত হন। তাদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
নিহত হৃদয়ের বড় ভাই জহিরুল ইসলাম দাবি করেন, নির্বাচনে রাজু জয়ী হন। কিন্তু পুলিশ ও প্রশাসনের লোকজন আজিজ সরকারকে জয়ী ঘোষণা করে চলে যাওয়ার চেষ্টা করে। এক পর্যায়ে ফের ভোট গণনার অনুরোধ করলে আজিজ সরকার বহিরাগত লোকজন নিয়ে গুলি করে। এ সময় পুলিশও রাজুর সমর্থকদের ওপর গুলি চালায়। তিনি জানান, তাঁর ভাই পেশায় টাইলস মিস্ত্রি ছিলেন। তিনি কোনো রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। তাঁকে আজিজ সরকারের ভাড়াটিয়া বহিরাগত সস্ত্রাসীরা গুলি করে হত্যা করেছে।
ওই কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, নির্বাচন শেষে ফল ঘোষণা করে ফেরার পথে কায়সার আহম্মেদ রাজুর সমর্থকরা আমাদের ওপর হামলা করে। এ সময় একজন নারী পোলিং এজেন্ট আহত হন।
সোনারগাঁ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এস এম কামরুজ্জামান বলেন, নির্বাচন শেষে দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে দুই রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়ে। এ সময় আজিজ সরকারের সমর্থকদের গুলিতে দু’জন গুলিবিদ্ধ হয়। তাদের মধ্যে হাসপাতালে একজনের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় পুলিশের আট সদস্য আহত হয়েছেন।
প্রসঙ্গত, পিরোজপুর ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মুজিবুর রহমানের গত বছরের ২০ মে ভারতের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হলে পদটি শূন্য হয়। গতকাল শনিবার সেখানে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।